তাজহাট জমিদার বাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
তাজহাট জমিদার বাড়ির নির্মাতা ছিলেন জমিদার গোপাল লাল রায়, যিনি রত্ন ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পদশালী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯০৮ সালে তিনি এই জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। “তাজহাট” নামটির উৎপত্তি হয়েছিল এখানকার রত্নভাণ্ডারের কারণে, কারণ এই প্রাসাদে বিপুল পরিমাণ রত্ন ও মণিমাণিক্য সংরক্ষিত থাকত।
পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রাসাদটির ব্যবহার পরিবর্তিত হয়। ১৯৮৪ সালে এখানে রংপুর হাইকোর্ট বেঞ্চ চালু করা হয়। পরে সেটি স্থানান্তরিত হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে তাজহাট জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলে। বর্তমানে এটি পর্যটক ও গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যঃ
তাজহাট জমিদার বাড়ি স্থাপত্যের দিক থেকেও এক অপূর্ব নিদর্শন।
1. প্রাসাদসদৃশ নকশা → ইউরোপীয় রেনেসাঁ শৈলীতে নির্মিত।
2. সাদা মার্বেল সিঁড়ি → বাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ, যা প্রাসাদের গরিমা আরও বাড়িয়ে তোলে।
3. বৃহৎ হলঘর ও বারান্দা → অভিজাত ভোজসভা ও জমিদার পরিবারের সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হতো।
4. গম্বুজ ও খিলান → উপরের গম্বুজ আর খিলানযুক্ত জানালাগুলো শৈল্পিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।
5. চারপাশের বাগান → সুবিশাল বাগান ও খোলা প্রাঙ্গণ পুরো প্রাসাদকে রাজকীয় আবহ দেয়
স্থাপত্যশৈলীর মহিমা
তাজহাট জমিদার বাড়ির স্থাপত্য নিছক ইট-পাথরের কাজ নয়, এটি শিল্প ও সংস্কৃতির নিদর্শন।
-
প্রাসাদটি তিন তলা বিশিষ্ট এবং পুরো ভবনটি সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি।
-
এর বিশাল সিঁড়িটি মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত, যা দর্শনার্থীদের চোখে রাজকীয় আবহ তৈরি করে।
-
ভেতরে রয়েছে জমিদার আমলের আসবাবপত্র, বিরল নথিপত্র, প্রাচীন মুদ্রা, প্রত্নবস্তু এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম।
-
এর বারান্দা ও করিডরগুলোর নকশা দেখে এখনো বোঝা যায় জমিদারদের ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যবোধ।
ভ্রমণ নির্দেশিকা
-
অবস্থান: রংপুর শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে।
-
যাতায়াত ব্যবস্থা: শহর থেকে রিকশা, অটো বা লোকাল পরিবহনেই সহজে পৌঁছানো যায়।
-
প্রবেশ সময়: প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। (শুক্রবার দুপুরে নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া হয়।)
-
টিকেট মূল্য: সাধারণ প্রবেশমূল্য খুবই নামমাত্র, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড়ও রয়েছে।
-
সেরা ভ্রমণ সময়: শীতকাল বা ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণ উপযোগী।
Comments
Post a Comment