Skip to main content

Unveiling the Secrets of Tajhat Jamidar Bari–The Hidden Gem of Rangpur

"তাজহাট জমিদার বাড়ি রংপুর: এক রাজকীয় ইতিহাসের গল্প"

আমারা "GEN-Z" রা আধুনিকতার স্পর্শে এসে বহির্বিশ্ব সম্পর্কে সকল জ্ঞান রাখি, বিশেষত যদি আলোচনা হয় বিদেশ যাত্রা তবে তো কথাই নেই। কিন্তু যখন প্রসঙ্গ আসে আমাদের নিজেদের  দেশ সম্পকে জানার তবে আমাদের মুখে আর কোন ভাষা থাকে না , অথচ আমাদের এই বাংলাদেশে যে কত প্রাচীন নির্মাণ রয়েছে তা আমাদের অজানা। আরে সমস্যা নেই  চলুন আজকে থেকে আমরা প্রতিদিন আমাদের দেশ সহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো। 'আজকের টপিক আমাদের উত্তরবঙ্গ রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি'।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুর জেলা শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেই নয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতির দিক থেকেও সমৃদ্ধ। আর সেই সমৃদ্ধির অন্যতম নিদর্শন হলো তাজহাট জমিদার বাড়ি। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, একসময় এখানে জমিদারদের আভিজাত্য ও ঐশ্বর্যের প্রতিফলন ঘটত। 

তাজহাট জমিদার বাড়ির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

তাজহাট জমিদার বাড়ির নির্মাতা ছিলেন জমিদার গোপাল লাল রায়, যিনি রত্ন ব্যবসার মাধ্যমে বিপুল সম্পদশালী হয়ে উঠেছিলেন। ১৯০৮ সালে তিনি এই জমিদার বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। “তাজহাট” নামটির উৎপত্তি হয়েছিল এখানকার রত্নভাণ্ডারের কারণে, কারণ এই প্রাসাদে বিপুল পরিমাণ রত্ন ও মণিমাণিক্য সংরক্ষিত থাকত।

পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এই প্রাসাদটির ব্যবহার পরিবর্তিত হয়। ১৯৮৪ সালে এখানে রংপুর হাইকোর্ট বেঞ্চ চালু করা হয়। পরে সেটি স্থানান্তরিত হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে তাজহাট জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলে। বর্তমানে এটি পর্যটক ও গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত।


স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যঃ

তাজহাট জমিদার বাড়ি স্থাপত্যের দিক থেকেও এক অপূর্ব নিদর্শন।

1. প্রাসাদসদৃশ নকশা → ইউরোপীয় রেনেসাঁ শৈলীতে নির্মিত

2. সাদা মার্বেল সিঁড়ি → বাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ, যা প্রাসাদের গরিমা আরও বাড়িয়ে তোলে।

3. বৃহৎ হলঘর ও বারান্দা → অভিজাত ভোজসভা ও জমিদার পরিবারের সমাবেশের জন্য ব্যবহৃত হতো।

4. গম্বুজ ও খিলান → উপরের গম্বুজ আর খিলানযুক্ত জানালাগুলো শৈল্পিক সৌন্দর্যকে তুলে ধরে।

5. চারপাশের বাগান → সুবিশাল বাগান ও খোলা প্রাঙ্গণ পুরো প্রাসাদকে রাজকীয় আবহ দেয়





স্থাপত্যশৈলীর মহিমা

তাজহাট জমিদার বাড়ির স্থাপত্য নিছক ইট-পাথরের কাজ নয়, এটি শিল্প ও সংস্কৃতির নিদর্শন।

  • প্রাসাদটি তিন তলা বিশিষ্ট এবং পুরো ভবনটি সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি।

  • এর বিশাল সিঁড়িটি মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত, যা দর্শনার্থীদের চোখে রাজকীয় আবহ তৈরি করে।

  • ভেতরে রয়েছে জমিদার আমলের আসবাবপত্র, বিরল নথিপত্র, প্রাচীন মুদ্রা, প্রত্নবস্তু এবং বিভিন্ন শিল্পকর্ম।

  • এর বারান্দা ও করিডরগুলোর নকশা দেখে এখনো বোঝা যায় জমিদারদের ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্যবোধ।








অজানা রহস্য ও কিংবদন্তিঃ

১. শোনাযায়, জমিদার গোপাল লাল রায়ের কাছে ছিল বিপুল রত্নভাণ্ডার, যার অনেকাংশ আজও হারিয়ে গেছে।
২.স্থানীয়দের মতে, প্রাসাদের ভেতরে গোপন সুড়ঙ্গ ছিল যা দূরের স্থানে পৌঁছাত।
৩.অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, প্রাসাদের ভেতরে এখনও অজানা নিদর্শন লুকিয়ে থাকতে পারে।


বর্তমান অবস্থা:

* বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত।
* এখানে এখন একটি "জাতীয় জাদুঘরের শাখা" রয়েছে, যেখানে রাখা আছে:

* প্রাচীন পাণ্ডুলিপি
* মুদ্রা ও অস্ত্রশস্ত্র
* প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
* স্থানীয় ও বিদেশি পর্যটকরা এটি দেখতে নিয়মিত আসেন, বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ ভ্রমণকারীরা





আপনারা ভ্রমণ করতে চাইলে সে দিকনির্দেশনা নিম্নে দেওয়া রইলো

ভ্রমণ নির্দেশিকা

  • অবস্থান: রংপুর শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে।

  • যাতায়াত ব্যবস্থা: শহর থেকে রিকশা, অটো বা লোকাল পরিবহনেই সহজে পৌঁছানো যায়।

  • প্রবেশ সময়: প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। (শুক্রবার দুপুরে নামাজের জন্য বিরতি দেওয়া হয়।)

  • টিকেট মূল্য: সাধারণ প্রবেশমূল্য খুবই নামমাত্র, শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড়ও রয়েছে।

  • সেরা ভ্রমণ সময়: শীতকাল বা ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণ উপযোগী।






*আপনি কি কখনো তাজহাট জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখেছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 
*তাজহাট জমিদার বাড়ি ছাড়াও রংপুরে কোন দর্শনীয় স্থান আপনাকে সবচেয়ে বেশি টানে?
*পরবর্তী ব্লগটি কোন স্থান নিয়ে করলে ভালো হয় জানাবেন অবশ্যই , ধন্যবাদ।

Comments

Popular posts from this blog

This is why he is SRK

আচ্ছা কখনো কি ভেবে দেঝেছেন কেনো শাহরুখ খান শুধু একজন অভিনেতা নন, একটি অনুভূতি? কী তাকে করে তুলেছে "কিং খান"? এই ব্লগে জেনে নিন সেই অদম্য যাত্রার গল্প। দিল্লি থেকে বলিউডে আসা সেই তরুণের জন্য প্রত্যাখ্যান ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। প্রডিউসাররা বলতেন, “লোকটা তো নায়কদের মতো দেখাই হয় না।” তাঁর কালো রং, দিল্লি-মুম্বইয়ের অহংকারী এক্সেন্ট – সবই ছিল প্রত্যাখ্যানের কারণ। কিন্তু এই ‘না’গুলোই তাঁর ভিতরে এক আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তিনি সিদ্ধান্ত নেন, যদি সোজা পথে নায়ক হওয়া না যায়, তবে ভিলেন দিয়েই শুরু করবেন। ‘বাজীগর’ ও ‘ডর’ এর মতো সিনেমায় অ্যান্টি-হিরো চরিত্র দর্শকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে। তিনি প্রমাণ করলেন, ব্যর্থতার ভয় তাঁকে সত্যিকার স্বপ্ন থেকে দূরে সরাতে পারবে না। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ,“যখন আপনি ব্যর্থ হন, তখন আপনি দুটি কাজ করতে পারেন – হয় বসে কাঁদতে পারেন, নয়তো উঠে দাঁড়িয়ে বলতে পারেন, ‘চলো, একটু হাঁটা যাক’। তিনি ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু থেমে যান নি সেইস্থান থেকে উঠে দাঁড়াতে শিখেছেন , শিখেছেন ধৈর্য ধরতে।তিনি শুধুএকজন সুপারস্টার নন; তিনি একটি অনুপ্রেরণা। তিনি সেই ব্যক্তি যিনি বিশ্ব...

রাজশাহীতে নির্মিত ব্রিটিশ আমলের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান

রাজশাহী কলেজ : উত্তরবঙ্গের ইতিহাস ও শিক্ষার গৌরব | ইতিহাস ও ঐতিহ্য ঃ রাজশাহী কলেজ ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, শুরুতে এটি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল । ১৮৭৮ সালে কলেজে রূপান্তরিত হয়ে উচ্চশিক্ষার পথে ধাপ রাখতে শুরু করে। পাকিস্তানকালে (১৯৪৭–১৯৭১) শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় কলেজ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। পরবর্তীতে অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করা হয়, যা কলেজকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শ্রেষ্ঠ কলেজগুলোর মধ্যে একটি করে তোলে । রাজশাহী কলেজের ইতিহাসের সংক্ষিপ্ত টাইমলাইনঃ ১৮৭৩: রাজশাহী কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এটি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে চালু হয়। ১৮৭৮: কলেজকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তর করা হয়। ১৯৪৭: পাকিস্তানকালীন সময়ে শিক্ষার মান ও পাঠক্রম উন্নত করা হয়। ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধের সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। পরবর্তী বছরগুলো: রাজশাহী কলেজ অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু করে। আধুনিক ল্যাব, লাইব্রেরি ও আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। শিক্ষার ...

ফ্রিল্যান্সিং জগতে আমার সবচেয়ে পছন্দনীয় সেক্টর

ফ্রিল্যান্সিং জগতে আমার সবচেয়ে পছন্দনীয় সেক্টর হলো, ডিজিটাল মার্কেটিং । ডিজিটাল মার্কেটিং: ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারের শক্তিশালী দিক আজকের অনলাইন দুনিয়ায় ব্যবসাগুলো তাদের ব্র্যান্ডকে প্রচার করতে সবচেয়ে বেশি ভরসা করছে " ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর"। তাই ফ্রিল্যান্সিং জগতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও চাহিদাসম্পন্ন সেক্টর হলো ডিজিটাল মার্কেটিং।  এখানে কাজের সুযোগ অসংখ্য – SEO  সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং  কনটেন্ট রাইটিং  ইমেইল মার্কেটিং  ভিডিও এডিটিং  যে কেউ নির্দিষ্ট স্কিলে দক্ষতা অর্জন করে সহজেই Fiverr, Upwork বা Freelancer.com এ কাজ পেতে পারে। শুধু ক্লায়েন্টের কাজ করাই নয়, চাইলে নিজের ব্র্যান্ডও গড়ে তোলা সম্ভব। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ডিজিটাল মার্কেটিং শেখার জন্য অনেক বড় ইনভেস্টমেন্ট লাগে না। নিয়মিত প্র্যাকটিস আর অনলাইন রিসোর্স ব্যবহার করেই দক্ষতা বাড়ানো যায়। ভবিষ্যতে এই সেক্টরের চাহিদা আরও বাড়বে, কারণ প্রতিটি ব্যবসাই অনলাইনে টিকে থাকতে চাইবে। তাই যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান, তাদের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং হতে পারে সোনালী সুযোগ । এটি শুধু আয় নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ক...