মূল্যবান সময় অপচয় রোধের কৌশল

"আজকেও দিনশেষে কাজের কাজ কিছুই করা হলোনা তার আগেই সময় শেষ হয়ে গেলো" এমন কথা কি আপনাদের মস্তিষ্কেও চিন্তার সৃষ্টি করে প্রতিদিন? কিন্তু কেন ?
চিন্তার কোন কারন নেই কারন, এই ভাবনা শুধু আপনার একার নয় প্রায় আমরা প্রতিটি মানুষই এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি প্রতিনিয়ত । এই বিষয়টার কারণ নিয়ে যদি একটু চিন্তা-বিশ্লেষণ করে দেখেন তবে যে মূল কারণটি আমাদের সামনে এসে ধরা দেয় তা হলো "সময় অপচয়"। প্রতিদিনই চিন্তা করেন যে আজকে কাজটি করবো তবে করা হয়ে ওঠে না এর পিছনেই কারন এই একটিই......।

কিন্তু কিভাবে এই মূল্যবান সময় কে বাঁচাবেন এবং তারই পাশাপাশি এই সময় কে কাজে লাগাবেন তাই নিয়ে আলোচনা করেছি আজকের ব্লগে , আপনিও এইসব কৌশল অবলম্বণ করতে চাইলে পড়তে থাকুন শেষ পর্যন্ত......

পেজ সূচিপত্রঃ

আচ্ছা কখনো কি ভেবে দেখেছেন আমরা প্রতিটি মানুষই দিনে ২৪ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি কোন খাতে আমাদের সময় বেশি ব্যায় করছি? 
  1. Social Media Platform
  2. Sleeping
  3. Eating
  4. Nothing 
ভাবছেন Nothing কেনো বললাম ? পড়তে থাকুন বুঝবেন, ইনংশাআল্লাহ্‌ ।

আমরা যারা পড়াশোনা করি আমাদের দিনের বেশিরভাগ সময় কাটছে ফোনের স্ক্রিনের সামনে (অনলাইনে ক্লাস করে)। এ বিষয়টি খারাপ নয়, তবে একবার ফোনের নোটিফিকেশনের ভিতর প্রবেশ করলেই কখন যে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে তা আমরা টেরই পাচ্ছি না । একই সমস্যা শুধু একজনের নয় বরং প্রতিজনের । যার ফলে একটি বড় সংখ্যক শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হচ্ছে ।

আচ্ছা আসুন আমরা যে ৪টি টপিক উপস্থাপন করলাম তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা  করা যাক

1.Social Media Platform :

বাংলাদেশে Social Media Platform বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো ঃ ফেসবুক, মেসেঞ্জার,  হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম,ইউটিউব । 

হয়তো এখনো ভাবছেন আসলেই কি আমরা এতক্ষন এইসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করি? তবে চলুন 

মে ২০২৫ রিপোর্ট পেশ করা যাক,

"মে মাসের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশে ৬৭.১৮মিলিয়ন মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করছে, যা মোট জনসংখ্যার ৩৭.৫% এবং ৬০ মিলিয়ন মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া তে রয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ৩৪.৩% ।

তাহলে বুঝেছেন ব্যাপারটা আমরা কি পরিমান এইসবে ডুবে আছি । শুধু তাই নয় আমরা আমাদের দিনের গড়ে ৫-৮ ঘন্টা রোজ এইসবে ব্যায় করছি । 

2.Sleeping :

অনেকেই হয়তো এই ভেবে অবাক হচ্ছেন যে ঘুমানো সময় অপচয়ের তালিকায় কেন? জি, আপনাদের ধারণা ঠিক তবে এইখানে আমি রাতের ঘুমের কথা আমি বলিনি । কারণ আমাদের জেনারেশন রাতে ঘুমানো বুঝেনা যা সময় অপচয়ের আর এক কারণ । হুমম, এইখানে আমি মেনে নিচ্ছি অনেকের অফিসের কাজ থাকতে পারে আবার অনেকের অনলাইন ক্লাস থাকে তবে সেটি অন্তত গভীর রাত পর্যন্ত চলমান থাকে না । কিন্তু আফসোস আমাদের রাত জাগার কারণ এইসব নয় । বেশিরভাগ মানুষই রাত জেগে ফেসবুক স্ক্রলিং করে নাহয় ফুটবল খেলা/সিনেমা দেখে যার ফলে তারা দেরিতে ঘুমাতে যায় এবং সে ঘুমটি হয়ে যায় অতিরিক্ত বেলা পর্যন্ত । আর ঠিক এইখানেই তাদের বেশি বেলা পর্যন্ত ঘুমের ফলে তারা তাদের কর্মক্ষেত্রে দেরিতে পৌঁছায় ,আর ভাবেই প্রতিনিয়ত তারা সময়টাকে কাজে লাগাতে পারছেনা।

3.Eating :

অনেকের প্রশ্ন হতে পারে কিভাবে খেতে সময়ের অপচয় হয় ? অবশ্য এইটা যুবকদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে না । এই টপিকটি শুধু  Young দের জন্যে তারা খেতে বসে অনিয়ম করে আবার খেতে বসে মোবাইল নিয়ে দিয়ে খাবার টেবিলেই তার তাদের সময়টি অপচয় করে থাকে (অভিভাবক দের একটু সতর্কতা এই সমস্যার নিরসণ করতে পারে)

4.Nothing :

Leisure এবং Nothing এর মাঝে কিছু Difference আছে । এইখানে আমরা Nothing কে Waste হিসেবে ধরতে পারি কারন এই সমস্যা আমাদের প্রতিটা বাঙালিদের । এই জেনারেশনের মানুষ অবসর নেওয়ার সময় পায় না কারন তারা পূর্বেই কি করবে / কি করবে না এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা । এবং এর ফলে কোন কাজ শুরু করার আগেই সেইখানে তাদের অর্ধেক যায় ।

যাক অনেক কথাই তো বলা হলো এখন আসি কিভাবে এই ব্যস্ত পরিবেশেও আমরা আমাদের সময় অপচয় হওয়ার আগেই তা সঠিক কাজে লাগাতে পারি । 

১.কালকের পরিকল্পনা আজই করুন

আশা করা যায়,এই প্রক্রিয়াটি আপনাদের সময় অপচয় রোধ করতে ভূমিকা রাখবে । অনেক সময়  দেখা যায় আমরা আমাদের অনেক প্রয়োজনীয় বই/ফাইল খুঁজে পাচ্ছিনা । অনেকক্ষণ সময় নিয়ে খোঁজার পর দেখা যায় চোখের সামনেই রাখা ছিলো কিন্তু বুঝতে পারেন নি । ঠিক তেমনি ধরুন কোথাও বন্ধুরা/ পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আগে যেমন পরিকল্পনা করে রাখি ঠিক তেমনি যদি আগামীকাল কি করবো সে পরিকল্পনা আমাদের মাথায় থাকে তবে কাজটিও সুসম্পন্ন হয় এবং এতে সময়ও ব্যয় কম হয়।

২.মনোযোগে বাঁধা সৃষ্টি করে এমন কিছু দূরে রাখুন

আমরা দেখলাম এবং পড়লাম মনোযোগের প্রতি আমরা অন্যমনস্ক থাকার ফলে আমাদের সময়ের কতটা ক্ষতি হচ্ছে । এইসব কারন গুলো এক করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়া যেমনঃ ফেসবুক, মেসেঞ্জার,  হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সটাগ্রাম,ইউটিউব এইসব প্লাটফর্মে আমরা আমদের সময়ের একটি অংশ সেখানে ব্যয় করছি। আমি বলছিনা/ বলতে চাইনা এইসব ব্যবহার ক্ষতিকর তবে অতিরিক্ত ব্যবহার করাটা কখনোই সমর্থন যোগ্য নয় । কারন কাজের সময় যে বিষয় গুলি আমাদের মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায় সেগুলো থেকে কাজের সময় দূরে রাখাটা উচিত। 

আরো পড়ুনঃ   How to Stay Healthy During Exam Time

৩.ঘুমানোর অভ্যাস ঠিক করুন

সঠিকভাবে ঘুমানোর অভ্যাস যেমন শরীরের জন্য ভালো তেমনই এইটির ফলে আমাদের সময় অপচয় রোধ হয় । যদি ঘুমানোর অভ্যাস ঠিক না থাকে তবে যে সমস্যা গুলো হতে পারে ঃ
  • মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে
  • মেজাজ খিটখিটে থাকে, সবসময় রাগীভাব অনুভূত হয়
  • রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ পেতে থাকে
  • দীর্ঘমেয়াদে হার্টের ঝুঁকি বাড়তে পারে
একজন সাধারন মানুষদের গড়ে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম দরকারি । 

অনেকেই বলে থাকেন তাদের ঘুমাতে সমস্যা হয় বা ঘুমাতে পারেনা তাদের জন্য কিছু টিপস নিম্নে দেওয়া হলোঃ

  • রাত ১০টা-১১টার মধ্যে ঘুমাতে চেষ্টা করবেন 
  • ঘুমানোর অন্তত ২৫ মিনিট পূর্বে সকল প্রকার ডিভাইস বন্ধ করে দিবেন
  • আপনারা চাইলে ছোট গল্পের বই পড়তে পারেন এতে ঘুম আসার সম্ভাবনা বাড়ে 
  • ঘুমানোর পূর্বে একগ্লাস গরম দুধ পান করতে পারেন

অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন ঘুম ভালো ভাবে নাহলে কাজে মনোযোগ আসবে না যার ফলে একটি কাজ করতে আপনার মূল্যবান সময়টি ব্যয় হবে । সুতরাং ঘুম গুরুত্বপূর্ণ ।

৪.পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন

অনেকেই এই টেকনিক সম্পর্কে ধারণা রাখেন আবার অনেকে রাখেন না , তাদের জানানোর জন্য বলছি পোমডোরো টেকনিক হলো এমন এক পদ্ধতি যা কাজকে ছোট ছোট মাধ্যমে ভাগ করে সম্পন্ন করা হয়। 

এই কাজ/টেকনিকটি সম্পন্ন হয় ৩টি মাধ্যমেঃ

  • ২৫ মিনিটের একটি সেট নির্ধারণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে থাকতে হবে এইসময়ে অন্য কোন কাজে মনোযোগ দেওয়া যাবেনা । এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে একটি টাইমারের প্রয়োজন হবে আপনারা চাইলে ফোনের টাইমার টি ব্যবহার করতে পারেন।
  • ২৫ মিনিটের কাজটি সম্পন্ন হলে/ ১টি সেট পূরন হলে ৫মিনিটের বিশ্রাম নিবেন । একে ছোট বিরতিও বলা যায় । এটি নিলে পরের সেট করতে ক্লান্তিভাব কম অনূভুত হবে।
  • বিশ্রাম নেওয়া শেষ হলে পুনুরায় কাজটি করতে থাকতে হবে এইভাবে কার্যক্রম টি সম্পন্ন করতে হবে ।

৫.Task Distribution Technique ব্যবহার করতে পারেন 

এই টেকনিক টি খুবই সহজ বলা যায় উপরের পদ্ধতিগুলোর চেয়ে । এটিকে খুব সহজেই বর্ণনা করা যায়, এর কাজ হচ্ছে যে কাজ টি আপনি পারেন না / পারবেন না সেটি অন্যকে দেওয়া বা অন্যের সাহায্যে কাজটি সম্পন্ন করা এতে সময় ও বেচে যায় এবং কাজটিও সম্পন্ন হয়ে যায়।

আশা করি এই ব্লগ থেকে আপনি আপনার সময় কে বাঁচানোর কিছু তথ্য পেয়েছেন এবং সে হিসেবে আপনি সেটি আপনার বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করবেন । মনে রাখবেন দিনে ২৪ঘণ্টার চেয়ে বেশি পাওয়ার কারো সুযোগ নেই তাই এটিকে অপচয় নয় বিনিয়োগ করা শিখুন ।

মনে রাখবেন হয়তো আপনার আজকের ২০মিনিট অপচয় হতে পারে আগামীর কোন সুযোগ হারানোর কারন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The ClickEra এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। কারণ,আপনাদের প্রতিটি কমেন্টে আমরা নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা পাই।

comment url